দেশের ইতিহাস

মানুষ কথায় কথায় উগান্ডা দেশটি নিয়ে ট্রল করে কেন? উগান্ডার অজানা তথ্য

মানুষ প্রায়ই সময় কিংবা কোথায় কোথায় উগান্ডা দেশকে নিয়ে ট্রল করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি উগান্ডা সম্পর্কে জানেন তাহলে উগান্ডা সম্পর্কে আপনার ধারনাই পালটে যাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে, কোন দেশের মানুষ কতটা কর্মক্ষম তার একটি চিত্র বেরিয়ে এসেছে এ সমীক্ষায়। বিশ্বের নানা দেশের ১৯ লাখ মানুষের ওপরে ওই সমীক্ষা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, উগান্ডা দুনিয়ার সবচেয়ে কর্মঠ দেশ। সেখানকার মাত্র ৫.৫ শতাংশ মানুষ তেমন কাজকর্মে আগ্রহী নন। বাকি ৯৪.৫ শতাংশ মানুষই কঠোর পরিশ্রমী।

উগান্ডা দুনিয়ার সবচেয়ে কর্মঠ দেশ

বর্তমান উগান্ডায় প্রাচীনতম মানব বসতি স্থাপন করেছিল আদিম শিকারী মানুষেরা। আজ থেকে আনুমানিক ২০০০ বা ১৫০০ বছর আগে বান্টু ভাষাভাষী জনগণ প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দেশটির দক্ষিণাংশে অভিবাসী হয়ে এসে বসবাস শুরু করে। এই জনগোষ্ঠীর লোকদের লোহার কাজ সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান ছিল এবং তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের নীতিও জানতো। ১৪শ ও ১৫শ শতকে রাজত্ব বিস্তারকারী কিতারা সাম্রাজ্য এখানকার প্রাচীনতম রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এই সাম্রাজ্যের পর দেশটিতে উত্থান ঘটে বুনিইওরো-কিতারা, বুগান্ডা এবং আনকোলে সম্রাজ্যের। পরবর্তী শতকগুলোতে এভাবেই ক্ষমতার পালাবদল অব্যাহত ছিল।

গবাদি পশু লালন-পালন

১২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নাইলোটিক জনগোষ্ঠীর লোকেরা এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করে। নাইলোটিকের মধ্যে মূলত লুও এবং অ্যাটেকার গোষ্ঠীর লোকেরা উত্তর দিক থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের পেশা ছিল গবাদি পশু লালন-পালন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কৃষিকাজ। এই কৃষকগোষ্ঠী মূলত দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চরে বসতি স্থাপন করে। লিওদের কিছু অংশ বুনিইওরো রাজত্বে আগ্রাসন চালিয়ে সেখানকার বান্টু লোকদের সাথে মিলিত হয়। এভাবেই সেখানে বাবিটো বংশধারা জন্ম হয় যারা বুনিইওরো-কিতারা রাজত্বের গোড়াপত্তন করে।

বসতি স্থাপন

১৯শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের পূর্বে এখানে অনেকগুলি শক্তিশালী রাজত্ব ছিল, যাদের মধ্যে বুগান্ডা ও বুনিয়োরো উল্লেখযোগ্য। ১৮৯৪ সালে উগান্ডা একটি ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটে পরিণত হয়। ১৯২৬ সালে এর বর্তমান সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯৬২ সালে এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭০-এর দশকে ও ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে উগান্ডা দুইটি রক্তঝরানো স্বৈরশাসন (ইদি আমিন ও মিল্টন ওবোতে) এবং দুইটি যুদ্ধের শিকার হয়। ১৯৮৬ সালে দেশটি বাস্তবদাবাদী নেতা ইয়োওয়েরি মুসেভেনির অধীনে স্থিতিশীল হয়। মুসেভিনি উগান্ডাতে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করেন।

উগান্ডা পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থল

উগান্ডা পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এডওয়ার্ড হ্রদ, আলবার্ট হ্রদ এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদ দেশটিকে ঘিরে রেখেছে। দেশটির আয়তনের প্রায় ১৮% হ্রদ এবং অন্যান্য জলাভূমি নিয়ে গঠিত। ১২% এলাকা জাতীয় উদ্যান হিসেবে সংরক্ষিত। বাকী ৭০% এলাকা বনভূমি এবং তৃণভূমি।উগান্ডা দেশটির ভূপ্রকৃতি বিচিত্র।

আরো পড়ুনঃ  নোয়াখালীকে নিয়ে এত ট্রল করা হয় কেন?

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করতে এইখানে ক্লিক করে স্টার বাটন প্রেস করুন।

সাভান্না তৃণভূমি

এখানে সাভান্না তৃণভূমি, ঘন অরণ্য, উঁচু পর্বত এবং আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া হ্রদের অর্ধেকেরও বেশি অবস্থিত। উগান্ডার জনগণ জাতিগতভাবে বিচিত্র। উগাণ্ডার রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শিল্পকলাসমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি। উন্নয়নশীল এই দরিদ্র রাষ্ট্রটি মূলত কৃষিপ্রধান।

গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ কাম্পালা হিলে অবস্থিত উগান্ডার জাতীয় মসজিদ। এটি উগান্ডা তথা পূর্ব আফ্রিকার সব থেকে বড় মসজিদ। ২০০৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ২০০৭ সালে চালু করা হয়। গাদ্দাফি মসজিদে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। উগান্ডায় অনেক মসজিদ রয়েছে; কিন্তু এ মসজিদের মিনার প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে। মসজিদের নাম রাখা হয়েছে লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির নামে। গাদ্দাফি মসজিদ লিবিয়ার পক্ষ থেকে উগান্ডার মুসলিম জনসংখ্যার জন্য উপহারস্বরূপ ছিল বলে এ নাম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পর এ মসজিদকে ন্যাশনাল মসজিদ বলা হচ্ছে।

কৃষকের প্রধান উৎপাদিত পণ্য কলা

উগান্ডার ৭৫ ভাগ কৃষকের প্রধান উৎপাদিত পণ্য কলা। বর্তমানে দেশটির অর্ধেক জমি এসেছে আবাদের আওতায়। আর ৭৮ শতাংশ জমিতেই রয়েছে কলা গাছ। কলা আবাদে ঝুট ঝামেলা কম। উর্বর মাটিতে চারা পুঁতে যৎসামান্য যত্ন করলেই ফলন নিশ্চিত। তাই যুগ যুগ ধরেই প্রধান খাদ্য পণ্য উৎপাদনেই পারদর্শিদতা উগান্ডার কৃষিজীবী মানুষের। দুর-দুরান্তের বাজারে বাই-সাইকেলে বিমেষ কায়দায় কলা বহন সেখানকার চিরপরিচিত দৃশ্যের একটি।

দেশজুড়ে রয়েছে কলার অসখ্য বাজার। উগান্ডার কলার চার রকমের ব্যবহারকে ঘিরে রয়েছে বহু সংখ্যক কলার জাত। সেদ্ধ করে প্রধান খাদ্য হিসেবে, বিয়ার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহারের জন্য, পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য এবং ডেজার্ট হিসেবে খাওয়ার জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক রকমের কলা।

পাখির এক বিশাল সম্ভার

উগান্ডা গরিলার জন্য বিখ্যাত হলেও সেখানে রয়েছে পাখির এক বিশাল সম্ভার। আদো মোবাম্বা জলাশয়ে বার্ড ওয়াচাদের নজর কারে শুবিল, স্টোয়ার্কের মত বহু বিরল পাখি। দেশটিতে এখন মাত্র দেড়শটির মত এই প্রজাতির পাখি রয়েছে। শিকার, পাচারের কারণে এবং বাসস্থানের অভাবে অনেক বিরল পাখি বিলুপ্তির পথে। উগান্ডায় ১ হাজার ৬১ প্রজাতির পাখির এই বিশাল আশ্রয় বিশ্বের ১১ শতাংশ পাখিকে ধারণ করছে। আর এসব পক্ষীকূলকে দেখতে প্রতিবছর বহু পাখিপ্রেমী আসেন উগান্ডায়।পাখি দেখা শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর দেশটির আয় ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। তবে, প্রচারণা বৃদ্ধির মাধ্যমে তা আরো বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন পাখিপ্রেমীরা। অনেক পর্যটকেরই অভিযোগ, একজন দক্ষ গাইডের অভাবে পাখির আবাস খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।

আরো পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরনের ইতিহাস
আকারে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালি গরিলা

পৃথিবীর বিভিন্ন জঙ্গলে ৭০০ পাহাড়ী গরিলা (আকারে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালি গরিলা) জীবিত আছে, যার মধ্যে ৩৩৬ টি বর্তমানে বাস করছে উগান্ডায়।

এক নজরে উগান্ডা
পুরো নাম : উগান্ডা প্রজাতন্ত্র।
রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর : কাম্পালা।
দাপ্তরিক ভাষা : ইংরেজি, সোয়াহিলি।
সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি ডমিনেন্ট-পার্টি সেমি-প্রেসিডেনশিয়াল রিপাবলিক।
আইনসভা : পার্লামেন্ট।
ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা : ৯ অক্টোবর, ১৯৬২।

আয়তন : দুই লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা : চার কোটি ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৫ জন,
ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৫৭.১ জন।
জিডিপি : মোট ৮৮.৬১০ বিলিয়ন ডলার,
মাথাপিছু আয় : দুই হাজার ৩৫২ ডলার।
মুদ্রা : উগান্ডান শিলিং।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button