ড্রাইভিং লাইসেন্স ডোপ টেস্ট সনদ নেওয়ার নিয়ম
|

ড্রাইভিং লাইসেন্স ডোপ টেস্ট সনদ নেওয়ার নিয়ম

আজ থেকে পেশাদার গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে লাগবে ডোপ টেস্টের সনদ। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডোপ টেস্ট সনদ ছাড়া কোন চালক নতুন লাইসেন্স ও পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবেন না। ৩০ জানুয়ারি রবিবার থেকে নতুন এ নিয়ম সকল লাইসেন্স প্রত্যাশীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের আবেদনপত্রের সঙ্গে ডোপ টেস্টের সনদ বিআরটিএতে জমা দিতে হবে।

গত ১৩ জানুয়ারি ডোপ টেস্ট বিষয়ক এক পরিপত্রে বলা হয়, ডোপ টেস্ট পজিটিভ (মাদক সেবনের আলামত) হয় বা তাতে বিরূপ মন্তব্য থাকে তাহলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না। সারাদেশে সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্রে ৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে ডোপ টেস্ট করা যাবে।

২০২০ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবহন চালকদের মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনাই এবার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, ডোপ টেস্টের বিষয়টি রোববার থেকে কার্যকর করা হবে। যারা পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসবে তাদের ডোপ টেস্টের সনদ বাধ্যতামূলক।

ডোপ টেস্ট কি?

ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট হলো কোন প্রাণীর শরীরের কোন অংশের নমুনা থেকে ঐ প্রাণীর শরীরে কোন নির্দিষ্ট মাদকের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। কখনো কখনো কোন খেলোয়াড় বা খেলায় অংশ নেয়া অন্যান্য প্রাণীর (যেমন-কুকুর, ঘোড়া) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকারের ড্রাগ ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় ভালো ফলাফল করে। এছাড়াও কখনো ছাত্রছাত্রীরা, বিভিন্ন চাকরীক্ষেত্রের কর্মজীবীরাও মনোযোগ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ড্রাগ সেবন করে। যেগুলোর পরবর্তী ফলাফল প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ভয়াবহ। সেকারণে এসকল মাদকের ব্যবহার প্রায় সকল দেশেই আইনত দন্ডনীয়। তাই ড্রাগ বা মাদক সেবনকারীদের সনাক্ত করার জন্য পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই ব্যবহৃত পদ্ধতিকে ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ  বিদেশে জন্ম গ্রহণকারী সন্তানের জন্য ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

ডোপ টেস্টের সময় পরীক্ষিত ড্রাগস

বাংলাদেশে ডিএনসি এর প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগ পরীক্ষা করা হবে। এসকল ড্রাগ এর রাসায়নিক উপাদান কারো দেহে পাওয়া গেলে তার ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে। এখানে  ড্রাগগুলোর তালিকা দেয়া হলোঃ

১) অপিওইডস (Opioids):  এই ধরনের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হেরোইন, মরফিন, কডেইন। 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করতে এইখানে ক্লিক করে স্টার বাটন প্রেস করুন।

২) মেথামফেটামিন (Methamphetamine): এটি মুলত ইয়াবা-এর মূল উপাদান। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত করে ইয়াবা তৈরী করা হয়।

৩) ক্যানাবিওনিডস (Cannabionids): এধরণের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গাঁজা বা মারিজুয়ানা, ক্যান্নাবিস, হাশিস।

৪) বেনজোডায়াজেপাইনস (Benzodiazepines): এর মাঝে উল্লেখযোগ্য মাদক হচ্ছে ডায়াজেপাম, ক্লোনাজেপাম, মিডাজোলাম।

৫) অ্যালকোহল: ডোপ টেস্টে ইথাইল অ্যালকোহল পরীক্ষার মাধ্যমে সকল প্রকার মদ ও মদজাতীয় পদার্থ সনাক্ত করা হবে।

ডোপ টেস্ট করার পদ্ধতি

বিভিন্ন মাদক প্রানীদেহে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তৈরী করে। তাই কোন মানুষ বা প্রাণীর দেহের কোন অংশ পরীক্ষা করে ঐ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সনাক্ত করে ঐ ব্যক্তি ঐ নির্দিষ্ট মাদক গ্রহণ করে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। ডোপ টেস্ট করার জন্য প্রথমেই কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর শরীরের কোন অংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা হিসাবে সাধারণত মূত্র, রক্ত, লালা, চুল, ঘাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। মুত্র ও রক্ত ব্যবহার করাটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রচলিত। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে হরমোন ও স্টেরয়েডও পরীক্ষা করা হতে পারে। 

ডোপ টেস্টের ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়ঃ

প্রাথমিক পরীক্ষা

বেশিরভাগ দেশেই সাধারণ ডোপ টেস্টের জন্য প্রাথমিক পরীক্ষায় মূত্র থেকে মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করার বানিজ্যিকভাবে তৈরী টেস্ট কিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টেস্টগুলো করার সময় সাধারণ ল্যাবরেটরিগুলো বেশকিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির নির্দিষ্ট মান ব্যবহার করে। টেস্টের ফলাফল ঐ মানের নিচে আসলে তাকে ডোপ নেগেটিভ ধরা হয়। এবং ফলাফলের মান তার চেয়ে বেশী আসলে তাকে ডোপ পজিটিভ ধরা হয়। প্রথম পরীক্ষায় অনেক সময়ই মাদক গ্রহণ না করলেও ডোপ পজিটিভ আসতে পারে। এর কারণ সাধারণত বিভিন্ন ঔষধ সেবন বা অন্য কোন শারীরিক গঠন। এগুলোর ফলে দেহে তৈরী হওয়া নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থের কারণে বেশকিছু ড্রাগ সনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে। তাই প্রাথমিক টেস্টটিকে সাধারণত অনুমান হিসেবে ধরা হয়। 

আরো পড়ুনঃ  ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম - পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে কিনা?

দ্বিতীয় পরীক্ষা

প্রাথমিক টেস্টের ফলাফল এক বা একাধিক রাসায়নিকের ক্ষেত্রে পজিটিভ আসলে আরেকটি টেস্ট করা হয়। যেটি তুলনামূলকভাবে প্রাথমিক টেস্টের চেয়ে নির্ভুল ও কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এই টেস্টের সাহায্যে ঐ ব্যক্তির দেহে কোন নির্দিষ্ট মাদকের ফলে সৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে কিনা তা জানা যায়। এবং ঐ ব্যক্তি মাদকাসক্ত কিনা তা সনাক্ত করা যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *